পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আজ। তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আজ শনিবার আবার ভোটাভুটি হবে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের বিরোধী দলের আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের বিষয়টি খারিজ করে দেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্টের জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টিও বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় পরিষদ আবারও পুনর্বহাল হয়েছে। কিন্তু ইমরান খান পুনর্বহাল হয়েছেন বলার কোনো সুযোগ নেই। আদেশ অনুযায়ী আজ বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে ইমরান খানকে। কেবল অনাস্থা ভোট নয়, পাঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতাও হাতছাড়া হওয়ায় আরও অনেক কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তা এক রকম নিশ্চিত।পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়ার অধিকার ডেপুটি স্পিকারের আছে কি-না, তা নিয়ে গত মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয় সে দেশের সুপ্রিম কোর্টে। গত বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
- ইমরান খানের ভাগ্য ভোটেই নির্ধারণ হবে : পাক সুপ্রিম কোর্ট
- প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণ আজ
- মহানবীর (সা.) অবমাননার বিরুদ্ধে কথা বলায় পুতিনকে ইমরান খানের অভিনন্দন
- আজ ক্ষমতার হাল ছেড়ে দিবেন ইমরান খান
যা ঘটতে যাচ্ছে পাকিস্তানে
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্য আইনসভার নিম্নকক্ষের অধিবেশন ডাকতে হবে স্পিকারকে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, ‘চলতি অধিবেশনেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা স্পিকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এবং তিনি অবিলম্বে যেকোনো সময় অধিবেশন ডাকতে পারবেন, তবে তা কোনোভাবেই শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর হওয়া যাবে না। ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাবের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিংবা কোনো ছুটি থাকলে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন কোনোভাবেই স্থগিত করা যাবে না।
গতকাল শুক্রবার যেকোনো সময় জাতীয় পরিষদের স্পিকারের নির্দেশনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট সচিবালয় শনিবার অধিবেশন আয়োজনের বিষয়ে বিস্তারিত আদেশ জারি করবে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আদেশ জারি হয়নি।
এর আগে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে গত ৭ মার্চ দেশটির জাতীয় পরিষদ সচিবালয়ে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। যাচাই-বাছাই শেষে স্পিকার তা আইনসভায় পেশ করেন ২৫ মার্চ। নিয়ম অনুসারে, স্পিকার ৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রস্তাবটি ভোটে দিতে বাধ্য ছিলেন।
মজার বিষয় হলো, ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ৩ এপ্রিলের অধিবেশন স্থগিতের পর বিরোধীরা নিজেরাই অধিবেশন পরিচালনা করে এবং সেখানে তাঁরা আয়াজ সাদিককে হাউসের স্পিকার নির্বাচিত এবং ১৯৭ ভোটে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করেন।
যেহেতু বিরোধী দল হাউসের স্পিকার আসাদ কায়সারের বিরুদ্ধেও অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে, সে ক্ষেত্রে তিনি শনিবারের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করতে পারবেন কি-না, সে বিষয়েও দ্বিমত দেখা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, স্পিকার আসাদ কায়সার শনিবার সংসদে সভাপতিত্ব করতে পারেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সরকার পুনর্বহাল হওয়ার পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গতকাল এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত বৃহস্পতিবার এক টুইটে ইমরান খান বলেন, ‘আগামীকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেব। জাতির উদ্দেশে আমার বার্তা হলো—আমি সব সময়ই আপনাদের সঙ্গে আছি এবং শেষ বল পর্যন্ত পাকিস্তানের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’
সব মিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও উচ্চ আদালত, সামরিক বাহিনী ও এর সঙ্গে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রসঙ্গও ক্রিয়াশীল। ইমরান বলেই দিয়েছেন যে, একটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। ইঙ্গিত সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
ইমরান খান সেনানিবাসের আনুকূল্য হারিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। আবার পাঞ্জাবের মতো প্রদেশে ক্ষমতা হারানো বলে দিচ্ছে, তাঁর প্রস্থান এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইমরানের হাতে আরেকটি বিকল্প আছে, আর তা হলো—পদত্যাগ। তবে সত্যিই কী হতে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত হতে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।